কংক্রিটের জঙ্গলে সবজি চাষ

হাইটেক নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে চাষবাস বাড়ছে। এযাবৎ দেশটি নিজস্ব খাদ্য চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদন করে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সে দেশের সরকার তা ৩০ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। আর তাই ইট, কাঠ, কংক্রিট জঙ্গলের ছাদে, বারান্দায় পথের ধারে চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নাগরিকেরাও লেগেছে পড়েছে চাষে। এছাড়া করোনা অতিমারির হাত থেকে বাঁচতেও বাড়িতেই বিষমুক্ত শাক সবজি চাষ করতে উৎসাহ দেখাচ্ছে নগরবাসীরা।

সিঙ্গাপুরের বেশ কিছু বহুতল ভবনের ছাদে উঠলে দেশে বিষমুক্ত চাষের একটা ধারণা পাওয়া যায়। ছাদের বাগানে কলা, তরমুজ, ফুলকপি, লঙ্কা, বেগুন, শাকপাতাসহ নানারকম সবজি চাষ করছে বহুতলবাসীরা। সরকার শুধু ভিডিও তৈরি করে শাকসবজি ফলানোর কাজে উৎসাহ দিচ্ছে না - বীজসহ নানা মালমশলা দিয়ে, প্রায় দেড় লাখ ‘স্টার্টার কিট’ পাঠানো হয়েছে নাগরিকদের কাছে। কয়েক দশক ধরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশটিকে বহুতল ভবনের জঙ্গল বললে অত্যুক্তি হয় না। অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে এই নগর রাষ্ট্রের মানুষজন সরকারের সহায়তায় সেখানেই গড়ে তুলছে সবুজের সমারোহ। আমাদের দেশের শহরগুলিতে কি এমন ভাবে চাষ করা যায় না!

সবুজবাস

দিল্লির একটি ভবন ভারতের প্রথম পাঁচতারা ‘সবুজ’ আবাসনের স্বীকৃতি পেয়েছে৷ ‘গ্রিন ওয়ান’ নামের ভবনটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলেছেন স্থপতি নীলাঞ্জন ভোয়াল। বড় বড় জানালার দৌলতে ঘরে অনেক আলো বাতাস ঢোকে আবাসনের ঘরগুলিতে৷ ভারতে অপেক্ষাকৃত নতুন ‘ডবল গ্লেজিং’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভবনটিকে ইনসুলেট বা কুপরিবাহী করা হয়েছে। ফলে গ্রীষ্মকালের তীব্র গরম সত্ত্বেও বাড়ির ভেতরটা ঠাণ্ডা থাকে৷ ভবনটিতে বৃষ্টির জল ধরে রেখে আবাসিকদের প্রায় ৭৫ শতাংশ জলের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এছাড়া সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোয়াল বলেন এভাবে নির্মাণের ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে আখেরে লাভ হয়৷ কারণ এই ধরনের নির্মাণে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি খরচ হলেও, পাঁচ বছরের মধ্যে তা উসুল হয়ে যায়। তারপর কার্যত বিনামূল্যেই সবকিছু চলে৷ স্থপতি ভোয়ালের মতে, এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সমৃদ্ধ হয়। নীলাঞ্জন বলেন, সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হলো, গ্রিন হোম আসলে অনেক সবুজ গাছভরা একটা বাড়ি। প্রচুর গাছপালা, ঘাস লাগালেই বাড়িটি সবুজ হয়ে গেল তা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়৷ সবুজ আবাসন তখনই পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে, যখন প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদ ব্যবহার করা হয়। জঞ্জাল কম ফেলা হয়। আর মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমানো হয়। এই স্থপতি বর্তমানে কার্বন নির্গমহীন আবাসন তৈরির পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। বর্তমানে ভারতে প্রায় ১৪ লাখ আধুনিক ‘সবুজ’ ভবন রয়েছে, যা আবাসন ক্ষেত্রের মাত্র পাঁচ শতাংশ ৷ আগামী দুই বছরের মধ্যে সংখ্যাটি দশ শতাংশ হতে পারে বলে স্থপতিরা আশা করছে। এর মধ্যেই কিছু রাজ্য সরকার পরিবেশবান্ধব নির্মাণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে ছাড় দিতেও শুরু করেছে৷

 

খুল যা শিম শিম

শিমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, আঁশ বা ফাইবার, ভিটামিন সি আর খনিজ রয়েছে। এগুলি শরীরের জন্য খুবই দরকারি। নিরামিষভোজীদের জন্য এই সবজি প্রোটিনের আধার। এর বীজ শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। শিমে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। সবজিটির পুষ্টিগুণ ও খনিজ পদার্থ চুল পড়া রোধে কাজ করে। আর চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। সবজিটিতে আঁশ থাকায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের জন্য উপকারী। শীতে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক আর প্রাণহীন। নিয়মিত শিম খেলে ত্বক ভালো থাকে এবং রোগবালাইও কম হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিমের পুষ্টিগুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শুধু বাড়িয়েই দেয় না, রোগকে শরীর থেকে দূরে রাখে। তাই যত দিন শিম পাওয়া যাচ্ছে ততদিন এটি হোক খাদ্যসঙ্গী। হেলথ অ্যালার্ট সূত্রে এখবর জানা গেছে।

 

সবজি খাবেন কীভাবে

শীত এলেই বাজারে পাওয়া যায় নানান সবজি। এ সময় বেশি বেশি সবজি খেলে নানা শারীরিক জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে আমরা অনেকেই পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সবজি খাওয়ার পদ্ধতি জানি না। এক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টিবিদেরা বলছে, ময়লা, পোকামাকড় ও রাসায়নিকের হাত থেকে বাঁচতে জল দিয়ে ভালো করে সবজি ধুতে হবে। এগুলি একটু লবণজলে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে আরো ভালো। সে সবজি কাঁচা খাওয়া হয় তা অবশ্যই লবণজলে ভিজিয়ে রাখা উচিত। সবজি খুব বেশি সেদ্ধ করলে ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয়ে যায়। তাই হালকা বা ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়াই ভালো। ভিটামিন ‘এ’ তেল বা ফ্যাটে দ্রবণীয়। তাই এই ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি রান্না করার সময় খানিকটা তেল ব্যবহার করতে হবে। মুখ বন্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে ৫-৭ দিন পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে সবজি রেখে খাওয়া যেতে পারে। তবে শীতকালে তাজা সবজি খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

 

চায়ে পে চর্চা

চা, কফি পান করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আড্ডা দিতে, ক্লান্তি দূর করতে, কাজের ফাঁকে চা-কফি পানের তুলনা নেই। কেউ চা খেতে বেশি পছন্দ করেন, কেউ আবার কফি। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা গ্রিন টি বেশি পছন্দ করেন। অনেকের আবার আদা চা, লেবু চা-তেই মন জুড়িয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্দি-কাশি নিরাময়ে আদা চা বেশি উপকারী। অনেকে সকালে লেবু-আদা চা পান করেন। লেবু-আদা চা পান করলে, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এই চায়ের আরো উপকারিতা রয়েছে। শারীরিক দুর্বলতা, গর্ভাবস্থা, কেমোথেরাপি বা চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে অনেক সময় বমি বমি ভাব আসে। এক্ষেত্রে, লেবু- আদা চা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আদা, জমে থাকা কফের হাত থেকে স্বস্তি দেয়। লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লেবু-আদা চা খেলে ক্লান্তি দূর হয়। এই চা হৃদরোগ ঝুঁকি কমায়। আদা রক্ত সরবরাহ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। লেবু শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে ভূমিকা নেয়। এতে বৃক্ক, যকৃৎ (কিডনি, লিভার) এবং অন্ত্রের নানা সমস্যা কমে। লেবু শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করায় হজম ভালো হয়। লেবু-আদা চা সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে দুটি উপাদানই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খুবই কার্যকর।

 

গৃহহীন ১০০ কোটি

বিশ্বে জনসংখ্যা ৭৮০ কোটি। তার মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি লোকের বাস করার মতো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। কোভিড নাইন্টিন সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষকে যখন ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, তখনই দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ৮ ভাগের এক ভাগ লোকের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। কোভিড নাইন্টিন একইসঙ্গে নিরাপদে জীবনযাপন, কাজ করা এবং শিক্ষার জন্য বাসগৃহকে নিরাপদ করা, বিশেষত স্বাস্থ্যসম্মত শুচিতার ব্যবস্থা থাকার আবশ্যকতাও তুলে ধরছে। সে সময় আবাসনহীন ১০০ কোটি মানুষের দল বুঝিয়ে দিচ্ছে আমাদের সবরকম কাজের পরিকল্পনা এবং তার প্রয়োগের দুর্বলতা।

রাষ্ট্রসংঘের মতে, ২০৩০ সালে আবাসনহীন মানুষের সংখ্যা হবে ১৬০ কোটি। এজন্য স্বল্পআয়ের পরিবারগুলি এবং বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এখন প্রয়োজন কম খরচের আবাসনের ব্যবস্থা। যাতে নিরাপত্তা, জল, পয়ঃব্যবস্থা, পরিবহন এবং অন্যান্য পরিষেবা সহজেই পেতে পারে এই মানুষগুলি। আবাসনের এই চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় ৯৬ হাজার বাড়ি তৈরি করা দরকার। এখানে উল্লেখযোগ্য, ভারতসহ বেশি জনসংখ্যার দেশগুলি এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আবাসনহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। জানুয়ারি - ২১ ২৬-০৬, আবাসন, স্বাস্থ্য

 

বৈচিত্রহীন

জীববৈচিত্র সুরক্ষায় যে কুড়িটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ছয়টি অর্জিত হয়েছে হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা। জীববৈচিত্র বিষয়ক সংস্থা, ইউএন কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির তাদের সাম্প্রতিক জীববৈচিত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন হারে জীববৈচিত্রের ক্ষয় বা অবনতি ঘটছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকৃতির সুরক্ষায় সামগ্রিক সাফল্য না থাকলেও, জীববৈচিত্রের কিছু লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। সেরকমই একটি উদাহরণ হল, গত দশ বছরে যতসংখ্যক পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, তার আরো চারগুণ বেশি হতো।

রিপোর্টে সুস্থায়ী কৃষি এবং খাদ্য ব্যবস্থা এবং শহরগুলির সবুজায়নের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বন ধ্বংসের হার কমানো, অতিমাত্রায় মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি প্রজাতির প্রাণী ও গাছপালার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে দেশি প্রজাতির প্রসার এবং সেগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপরেও দেশগুলিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

জানুয়ারি - ২১ ২৬-০৭, জীব বৈচিত্র, স্বাস্থ্য