অ্যানথ্রোপসিন মহামারি ও আগামী পৃথিবী
সুব্রত কুণ্ডু

পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। আমাদের চারপাশে জীব ও জড়ের পরস্পরের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার ভূতাত্ত্বিক পর্ব হল হলোসিন। ১১ হাজার ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই হলোসিন পর্ব গড়ে উঠেছিল। তথাকথিত আধুনিকতার নামে মানুষকেন্দ্রিক ভোগবাদে ভর করে আমরা একটি নতুন ভূতাত্ত্বিক যুগ – অ্যানথ্রোপসিন-এ প্রবেশ করেছি। অপরিসীম প্রকৃতি শোষণের এই যুগের প্রভাব, বাস্তু ব্যবস্থা (ইকোলজি) এবং প্রতিবেশে সব জীব ও জড়ের ওপরই খুব প্রকট। জলবায়ু বদল থেকে শুরু করে নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব এবং তার ফলে মহামারির প্রভাবে আমাদের টিকে থাকাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

নতুন এই পর্বে বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে ক্ষুদ্র জীবাণু এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে সংক্রমিত হচ্ছে। এর ফলে নতুন নতুন মহামারির আবির্ভাব হচ্ছে। এক জীবের দেহ থেকে অন্য জীবের রোগ সৃষ্টিকারী এই প্রক্রিয়াকে জুনোসিস এবং রোগগুলিকে জুনোটিক রোগ বলা হয়। কোভিড-১৯ সহ সার্স, ইবোলা ইত্যাদি হল জুনোটিক রোগ, যা একের পর এক মহামারি ডেকে আনছে। যেকোনো জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল বংশবৃদ্ধি, আর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়া।

অ্যানথ্রোপসিন পর্বে মানুষের ভোগের সব সীমারেখা উজাড় হয়ে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক লুন্ঠন চলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ এখন অনিয়ন্ত্রিত আর্থিক পুঁজি তৈরির অস্ত্র। ফলে সব জীবকূলের জীবন নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের নিয়ম মতো, সব জীব বাঁচার তাগিতে পরিবর্তন করে নিচ্ছে নিজেদেরকে। সন্ধান করছে নতুন বাসস্থান। বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্র, যা মহামারি ঘটাচ্ছে মানুষ সহ বিভিন্ন জীবের।

এই সব জীবাণুগুলি জীবনচক্র কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন। ফলে দ্রুত তারা নিজেদের নতুন পরিস্থিতির জন্য অভিযোজিত করে নিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোভিড-১৯ এর এখন একাধিক স্ট্রেন দেখা যাচ্ছে। এতে কোথাও কোথাও আতিমারির প্রভাব বাড়ছে। আর্নে নায়েস ডিপ ইকোলজির প্রবক্তা। ১৯৭৩ সালে তিনি এই তত্ত্ব উপস্থাপন করে বলেন,পৃথিবীটা পাখি, গাছ, মানুষ সবার। ভোগবাদের প্রবক্তারা বলে, এই ধারণা মানুষ আর উন্নয়ন বিরোধী। তারা বলে এ জগত মানুষেরই জন্য। আর তাই আরো বেশি বেশি করে প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ ও লুন্ঠনে ছাড়পত্র দেওয়া চলতেই থাকে।

এ দেশে করোনা অতিমারির সময়ে সরকার এমন সব আইন কানুন এনেছে তা এই লুঠে মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতিদের মৌরসিপাট্টা স্থাপন করারই নামান্তর। পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে আমারা কিছু শিখছি না। ফলে তথাকথিত উন্নতির সঙ্গে বেড়ে চলেছে মানুষের মনোজগতের সমস্যা। অপরিমিত ভোগ, ঈর্ষা, দ্বেষ, হিংসা, লোভ-লালসা ডেকে আনছে মহামারি, অনাহার, দুর্ভিক্ষের মতন বৃহৎ সামাজিক সমস্যা। ছোট ছোট পায়রার খোপে বন্দী থেকে মানুষ ক্রমশ বিচ্ছিন্নতার পাঠ নিচ্ছে। ফলে বাড়ছে মানসিক রোগ। এহেন পরিস্থিতিতে প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ, তার সংবর্ধন একমাত্র মুক্তির পথ। এক অদ্ভুত আঁধারে দাঁড়িয়ে এইভাবে কি একবার ভেবে দেখা যায়? এপ্রিল - ২১ ২৬-২১, জলবায়ু বদল, মহামারি

জলবায়ু বদল রুখতে সরকারি উদ্যোগ

জলবায়ু বদলের পরিবর্তনের প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। এর ফলে, ৫টি ক্ষেত্র – জল, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কৃষি ও শক্তি বিশেষ করে প্রভাবিত হচ্ছে। তাই, এর মোকাবিলায় শহরে জলবায়ুর অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং হিমালয় অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্রের সমীক্ষা ও বিশ্লেষণের একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর জল, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কৃষি ও শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে ৫ বছর মেয়াদী এক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে।

পৃথিবী ক্রমশ গরম হচ্ছে। বদল হচ্ছে জলবায়ু। এই বদলের প্রভাব যদি এখনই রোধ করা না যায়, তা হলে সমুদ্রের জলতল বাড়তেই থাকবে। শহরগুলিতে ঘন জনসংখ্যার কারণে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষণের তারতম্য ঘটায় হড়পা বাণের ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন কারণে বর্ষা অনিয়মিত হচ্ছে। কখনো খুব বেশি বা কখনো একেবারেই বৃষ্টি হচ্ছে না। এগুলি সবই উদ্বেগের কারণ। দেশের প্রায় সবকটি রাজ্যেই জলবায়ু বদলের প্রভাব পড়ছে। এই বদলের প্রভাবের দিক থেকে ঝাড়খন্ড সবচেয়ে বেশি অসুরক্ষিত এবং মহারাষ্ট্র সবচেয়ে কম প্রভাবিত। পশ্চিমবঙ্গ সহ ৮টি রাজ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। এই প্রেক্ষিতে এযাবৎ কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের সহায়তায় জলবায়ু বদলের কর্মসূচি নিয়ে দেড় হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজারটি আন্তর্জাতিক জার্নালগুলিতে স্থান করে নিয়েছে। সরকার বলছে, তারা জলবায়ু বদলের মোকাবিলায় ১০০টি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। বিভিন্ন রাজ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা এর কুপ্রভাব সম্পর্কে জন সচেতনতা গড়ে তুলতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, শুধু গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু বদল কি রোখা যাবে?

এপ্রিল - ২১ ২৬-২২, জলবায়ু বদল, সরকারি উদ্যোগ

উপকারী কাঁচা কলা

কাঁচা কলা খুবই উপকারী সবজি। যদি বাড়তি ওজন কমাতে চান, তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন এই সবজি। কাঁচা কলার আঁশ বা ফাইবার অনেকটা সময় পেট ভরিয়ে রাখে। এর আঁশ চর্বি কমাতেও সাহায্য করে, রক্তে শর্করা বা চিনি নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-৬ গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলায় প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, প্রতিদিন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সবজি, ফল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। তবে পটাসিয়াম সবার জন্য নিরাপদ নয়। উচ্চ রক্তচাপ অথবা কিডনির রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাঁচা কলা খাওয়া উচিত। কাঁচা কলা আঁশযুক্ত সবজি হওয়ায় এটি খুব সহজে হজম হয়। এই সবজি পেটে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়। তবে অতিরিক্ত পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে কাঁচা কলা না খাওয়াই ভালো। এই সবজি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যাও অনেক সময়ে বাড়িয়ে দেয়।কাঁচা কলায় থাকে এনজাইম, যা ডায়রিয়া এবং পেটের নানা সংক্রমণ দূর করে। তাই ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। হেলথ অ্যাকশন সূত্রে এখবর জানা গেছে।

এপ্রিল - ২১ ২৬-২৩, খাদ্য, স্বাস্থ্য

অসুখী ভারত

সুখী দেশের তালিকায় এক্কেবারে তলানিতে ভারত। ১৯ মার্চ প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২১-এর তালিকায় ১৪৯ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৯। তালিকার টানা চার বছর শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড।২০১৯-এর রিপোর্টে ভারতের স্থান ছিল ১৪০। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রতিবেশী দেশশ্রীলঙ্কা ১২৯, পাকিস্তান ১০৫, বাংলাদেশ ১০১, নেপাল ৮৭ এবং চিন ৮৪ তম স্থানে রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে জিডিপিবা গড়জাতীয় উৎপাদন, গড় আয়ু, সামাজিক উদারতা, সামাজিক সহায়তা, স্বাধীনতা এবং দুর্নীতির উপর ভিত্তি করে সুখী দেশগুলির তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রসংঘ। এ বছর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি।

এপ্রিল - ২১ ২৬-২৪, সমাজ, মানবতা

শিক্ষায় বাজেট কমছে

দেশের জিডিপি বা গড়জাতীয় উৎপাদনেরছয় শতাংশশিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি পুরানো দাবি। তবেএবছরের হিসেব যাচাই করলে বোঝা যাবে, জিডিপির ছয় শতাংশেরধারে কাছে পৌঁছোয়নি কেন্দ্রীয় শিক্ষা বাজেট। সরকারি হিসেবে, ২০১৯-২০ সালে ভারতের মোট জিডিপির আনুমানিক মূল্য ছিল ১৪৫.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। এই হিসেবে ৬ শতাংশ হল ৮ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে শিক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৯৯,৩১১ কোটি টাকা। ২০২১-এ তা কমে হয়েছে ৯৩,২২৪ কোটি টাকা। এবছরের বাজেট গত তিন বছেরের বাজেটের মধ্যে সবথেকে কম। নতুন শিক্ষানীতিতে সর্বশিক্ষা অভিযান এবং রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানকে এক করে নাম দেওয়া হয়েছিল সমগ্র শিক্ষা অভিযান। এই অভিযানে গতবছর বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এবছর তা কমে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০ কোটি।

মিড ডে মিল খাতে এ বছর বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের থেকে ৫০০ কোটি টাকা বেশি। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে – ৫ এ দেশে অপুষ্টির এক ভয়াবহ অবস্থা আমরা দেখেছি। ২০২০ সালে কোভিডের ফলে স্কুল বন্ধ ছিল। খাবারের অভাব হয়েছিল স্কুল পড়ুয়াদের। সেই হিসেবে বরাদ্দ যা বেড়েছে তা বেশ কম। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের উত্সাহিত করার পরিকল্পনাগুলিরবাজেটেওবরাদ্দ কমেছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছাত্রীদের, বিশেষ করে মহামারি চলাকালীন সময়ে স্কুল ছাড়ার ঘটনা বেড়েছে। এই অবস্থায় বাজেট বরাদ্দ কমার কারণে ছাত্রীদের শিক্ষা আরো ব্যাহত হবে বলে শিক্ষাব্রতীরা মনে করছে।

নতুন শিক্ষানীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে স্কুল পাশ করা ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার বাজেটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ কমেছে।

সূত্রঃ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটপত্র এপ্রিল - ২১ ২৬-২৫, শিক্ষা, কেন্দ্রীয় বাজেট

যোগ যোগাসন

ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক (এনসিএফ) ২০০৫, স্বাস্থ্য ও শরীরশিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে যোগাসনকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। বলা হয়েছিল, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি অবধি বাধ্যতামূলক আর একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যোগাসনকে।ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ও শরীরশিক্ষার ওপর প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে সমন্বিত পাঠক্রম তৈরি করছে যোগাসনকে নিয়ে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক সূত্রে এখবর জানা গেছে।

এপ্রিল - ২১ ২৬-২৬, শরীরশিক্ষা, স্বাস্থ্য

 

 

 পুরনো সংস্করণ    spmar21   spfeb21   spjan21